ইসলামোফোবিয়া: একটি পরিভাষার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও রাজনীতি
Article
ভূমিকা
“ইসলামোফোবিয়া” শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯১০ সালে। ফরাসি ভাষায়: Islamophobie. ব্যবহারকারী ছিলেন জনৈক উপনিবেশিক কর্মকর্তা আলাঁ কিলিয়েন।
ইংরেজি ভাষায় শব্দটি প্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জনপ্রিয় হয় Runnymede Trust (1997)য়ের প্রতিবেদন ইসলামোফোবিয়া: আ চ্যালেঞ্জ ফর আস অলয়ে। যেখানে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি অযৌক্তিক ভয়, ঘৃণা ও বৈষম্য হিসেবে এটি সংজ্ঞায়িত হয়েছিল। এই প্রতিবেদনের লক্ষ্য ছিল যুক্তরাজ্যের মুসলিম নাগরিকদের প্রতি বৈষম্যকে বর্ণবাদের সমতুল্য হিসেবে নীতি পর্যায়ে স্বীকৃতি দেয়া। তবে গবেষকরা দেখান, ইসলামোফোবিয়া অভিনব কিছু নয়। Allen (2010) বলেন, এই শব্দটি বিশ শতকের শেষ দিকে জনপ্রিয় হলেও এর অন্তর্নিহিত কাঠামো — অর্থাৎ মুসলমানদের “অপর” হিসেবে উপস্থাপন — অনেক পুরনো। এটি একদিকে “ধর্মীয় ভয়”, অন্যদিকে “রাজনৈতিক শত্রুনির্মাণ” প্রক্রিয়া। Green (2019)য়ের মতে, পশ্চিমা সমাজে ইসলামোফোবিয়া কেবল ব্যক্তিগত পূর্বানুমান নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উৎপাদিত ও সংরক্ষিত একটি কাঠামোগত ভীতি।
এই নিবন্ধের মূল উদ্দেশ্য ইসলামোফোবিয়াকে নিছকই ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা হিসেবে না দেখে একটি রাজনৈতিক প্রকল্প হিসেবে বিশ্লেষণ করা। এই প্রক্রিয়া বর্ণবাদ, উপনিবেশবাদ ও আধুনিক রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নীতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। আমাদের আলোচনা সংক্ষেপে দেখাবে কীভাবে ইওরোপীয় ইতিহাসে গভীরভাবে প্রোথিত ইসলামোফোবিয়া সমকালীন বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন রূপে ফিরে এসেছে।
তাত্ত্বিক কাঠামো: ভীতি যখন রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার
ইসলামোফোবিয়া বুঝতে আগে ভয়ের রাজনৈতিক চরিত্র বুঝতে হবে। “ফোবিয়া” বলতে সাধারণত মনস্তাত্ত্বিক ভীতি বুঝালেও এখানে তা এক ধরনের সামাজিক নির্মাণ। যার মাধ্যমে “আমরা” ও “ওরা”র বিভাজন তৈরি হয়।
Said (1978) তাঁর ওরিয়েন্টালিজময়ে দাবি করেছেন, পশ্চিমা জ্ঞানব্যবস্থা ইসলামকে “অন্য সভ্যতা” হিসেবে কল্পনা করে। যেখানে স্রেফ ইসলামের বিরুদ্ধে গিয়েই ইওরোপ নিজেকে আধুনিক ও যৌক্তিক হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে। যে বিপজ্জনকরূপে সংকীর্ণ সংজ্ঞায়নে আধুনিক ও যৌক্তিক হওয়ার অর্থই দাঁড়ায় ইসলামি না হওয়া।
Kumar (2012) যুক্তি দেন, ইসলামোফোবিয়া সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতির হাতিয়ার। তাঁর মতে, এই বন্দোবস্তে ভীতি উৎপাদন করা নিজেই রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের একটি প্রক্রিয়া মাত্র। ইসলামকে সহিংসতার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, যেন সামরিক হস্তক্ষেপ ও নজরদারি ন্যায্যতা পায়।
Massoumi, Mills, and Miller (2017) দেখিয়েছেন, ইসলামোফোবিয়া রাষ্ট্র, গণমাধ্যম ও কর্পোরেটদের যৌথ উৎপাদন, যা জনমত গঠনের মাধ্যমে “নিরাপত্তার রাজনীতি”কে টিকিয়ে রাখে।
ইসলামোফোবিয়ার শেকড় খুঁজতে আরো গভীরে গেছেন Aziz (2022)। তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ধর্মীয় পরিচয়কে বর্ণবাদী বৈষম্যের সাথে মেশানো হয়। যেখানে মুসলমানদের একটা “রেস” হিসেবে দেখা হয়। রেসিয়ালাইজ করা হয়। তাঁর “রেসিয়াল মুসলিম” ধারণা অনুসারে, দেশটিতে মুসলমানরা একটা রেসিয়ালাইজড ধর্মীয় সম্প্রদায়ে পরিণত হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে কৃষ্ণাঙ্গরা যে বর্ণবাদী বৈষম্যের শিকার হতেন, মুসলমানদের সেই কাঠামোর মধ্যে ঢোকানো হয়েছে। এটা সরল অর্থে ধর্মীয় বিদ্বেষ নয়, বর্ণবাদ।
বর্ণবাদের চরিত্র অনুযায়ীই এই বৈষম্য “ব্যক্তিগত” নয়। কাঠামোগত ও পদ্ধতিগত। যা মুসলমানদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন করা ও জনপরিসরে বৈষম্যমূলক আচরণকে বৈধতা দেয়।
Nguyen (2019) এই প্রক্রিয়ার নাম দিয়েছেন নজরদারি বর্ণবাদ। যেখানে রাষ্ট্রের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা কাঠামো ধর্মীয় পরিচয়কে অপরাধের সূচক হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে ইসলামোফোবিয়াকে নিতান্তই ব্যক্তিগত ভয়ভীতি হিসেবে দেখার সুযোগ নেই, এটা একপ্রকার শাসন কৌশল।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: মধ্যযুগীয় ইওরোপ থেকে উপনিবেশবাদের সিলসিলা
ইসলামোফোবিয়ার শেকড় নিহত আছে মধ্যযুগীয় ইওরোপীয় রাজনীতিতে। ক্রুসেডের যুগে প্রথমবারের মত ইসলামকে খ্রিস্টধর্মের প্রতিদ্বন্দ্বী ও “অসভ্য শত্রু” হিসেবে চিত্রিত করা হয়। তবে ক্রুসেডের অবসানে এর অবসান হয়নি।
Sheehi (2011) দেখিয়েছেন, এই “শত্রু ভাবমূর্তি” ইওরোপীয় চেতনায় এত গভীরভাবে শেকড় গাড়ে, যে পরবর্তী শতাব্দীগুলোতেও ইসলাম হয়ে দাঁড়ায় যুদ্ধ, সহিংসতা ও অন্ধকার যুগের প্রতীক।
এ সময়ই গড়ে ওঠে সিভিল্যইজেশনাল অ্যানজাইটি। একটি উদ্বেগ। যা ইওরোপীয় পরিচয়ের অংশ হয়ে যায়।
উপনিবেশিক যুগে ইসলামোফোবিয়া এক নতুন রূপ নেয়। Said (1978) বলেন, ওরিয়েন্টালিজমের মাধ্যমে ইসলামকে অধ্যয়ন ও শাসনের বস্তুতে রূপান্তরিত করা হয়। “প্রাচ্য” হয়ে ওঠে জ্ঞান ও ক্ষমতার ক্ষেত্র।
Green (2019) দেখান, উনিশ শতকে ইওরোপীয় রাজনীতিতে মুসলমানদের “অগ্রগতির প্রতিবন্ধক” হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। যা পরবর্তীতে উপনিবেশিক প্রশাসনিক নীতি নির্ধারণকে প্রভাবিত করে।
বিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে ইওরোপে মুসলিম অভিবাসীদের আগমন ইসলামোফোবিয়াকে নতুন সামাজিক চেহারা দেয়।
Fekete (2009) দেখিয়েছেন, ইওরোপীয় অভিবাসন নীতিতে মুসলমানদের সাংস্কৃতিকভাবে “অভিযোজন অক্ষম” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে মুসলমানরা সমষ্টিগতভাবেই “অভিবাসী অপরে” পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়া ধর্মীয় পরিচয়ের সাথে বর্ণবাদী বৈষম্যকে একাকার করে আধুনিক ইসলামোফোবিয়ার ভিত গড়ে।
৯/১১-পরবর্তী বিশ্বায়িত ইসলামোফোবিয়া
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর ইসলামোফোবিয়া এক বৈশ্বিক রাজনৈতিক রূপ নেয়।
Beydoun (2018)য়ের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের কথিত “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” নীতির ফলে বিশ্বব্যাপীই মুসলমানরা প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। এ সময় ইসলামোফোবিয়াকে আইনী রূপ দেয়া হয়। Nguyen (2019) দেখিয়েছেন, কিভাবে এই “সন্দেহভাজন সম্প্রদায়ের” ধারণা মুসলমানদের নাগরিকত্বকেই সন্দেহের আওতায় ফেলে দেয়।
এই প্রক্রিয়া স্রেফ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সীমিত থাকেনি।
Hajjat and Mohammed (2021) দেখিয়েছেন, ফ্রান্সে সেক্যুলারিজমের (laïcité) দোহাই দিয়ে রাষ্ট্র কীভাবে মুসলমান নারীর পোশাককে রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। ২০০৪ সালের পাবলিক স্কুলগুলোয় স্পষ্টত ধর্মীয় প্রতীকসম্বলিত পোশাক নিষিদ্ধকরণ আইন, হিজাব যার অন্তর্গত, ইসলামোফোবিক নীতির প্রকাশ্য রূপ। সমালোচকদের মতে, এই নীতিতে সেক্যুলারিজম অজুহাত মাত্র; আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনপরিসর থেকে ইসলামের প্রতীকগুলোর দৃশ্যমানতা মুছে ফেলা।
Awan and Zempi (2019) দেখিয়েছেন, কীভাবে একই সময়কালে সামাজিক মাধ্যম ও সাইবারস্পেসভিত্তিক ঘৃণা অপরাধ ইসলামোফোবিয়াকে ব্যক্তিগত জীবনের চৌহদ্দিতেও ঢুকিয়ে দেয়।
Allen (2010)য়ের দাবি, ৯/১১-পরবর্তী ইসলামোফোবিয়া মোটেও নজিরবিহীন নয়। সেই পুরনো ভীতিই। স্রেফ নতুন সময়ের চাহিদা অনুযায়ী রূপবদল করা। যার মোড়কটা আধুনিক। কিন্তু ভেতরে মধ্যযুগীয় ও উপনিবেশিক ভীতিই আছে। ইসলামোফোবিয়া তাই সরল অর্থে আধুনিক কিছু নয়। আধুনিক জামানায় মধ্যযুগীয় ও উপনিবেশিক ইওরোপের উত্তরাধিকার।
বিশ্বায়িত ইসলামোফোবিয়ার প্রসারে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মুসলমানদের একটি সমষ্টি হিসেবেই “নিরাপত্তা হুমকি” ও “সাংস্কৃতিক বহিরাগত” হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। যা একদিকে মুসলমানদের নাগরিক অধিকার বিপন্ন করে, অন্যদিকে অমুসলিমদের মধ্যে আতঙ্ক বৃদ্ধি করে।
অপশ্চিমা বিশ্বে ইসলামোফোবিয়া ও পরিভাষার অপব্যবহার প্রসঙ্গে
ইসলামোফোবিয়া আজ কেবল পশ্চিমা সমাজের সমস্যা নয়। এটি ক্রমেই বৈশ্বিক রাজনীতির ভাষা হয়ে উঠেছে। যা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।
Kumar (2012) দেখান, ইসলামোফোবিয়ার মূলে নিছকই ভীতি নয়। আছে ক্ষমতা বাসনা। এটি এক ধরণের সাম্রাজ্যবাদী নীতিকৌশল, যার মাধ্যমে সামরিক আগ্রাসন, অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যকে বৈধতা দেয়া হয়।
Razack (2022) দেখান, কথিত “post-truth” যুগে ইসলামোফোবিয়া এমন এক যুক্তিতে টিকে আছে যেখানে বাস্তব প্রমাণ নয়, বরং রাজনৈতিক আবেগই নীতি নির্ধারণ করে।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে এই প্রবণতা বিশেষভাবে স্পষ্ট। Taras (2012) বলেন, ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি “জেনোফোবিয়া ও ইসলামোফোবিয়ার” সংমিশ্রণ — যেখানে মুসলমানরা রাষ্ট্রীয় “জাতীয়তাবাদের” “অভ্যন্তরীণ শত্রু” ভাবা হয়। একইভাবে, চীনের শিনজিয়াং অঞ্চলে উইঘুরদের ওপর যে দমননীতি চালু আছে, তা আসলে “চরমপন্থা-বিরোধিতার” নামে ইসলামোফোবিয়ার চীনিকৃত সংস্করণ (Beydoun 2018)।
এমনকি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজেও ইসলামোফোবিয়া দেখা যায়। Bayraklı and Hafez (2020) দাবি করেছেন, আজকের বিশ্বে ইসলামোফোবিয়াকে নিছকই পশ্চিমা সমাজে সীমিত কিংবা অমুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজে অমুসলিম সংখ্যাগুরুদের সাথে মুসলিম সংখ্যালঘুদের দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। তাঁদের মতে, এটা খোদ মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজেরই ক্ষমতাশীলদের সাথে ক্ষমতাহীনদের সংঘাত হিসেবে দেখতে হবে।
তবে যে কোন পরিভাষাই অপব্যবহৃত হতে পারে। ইসলামোফোবিয়াও ব্যতিক্রম নয়। বিশেষত মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজে এই পরিভাষার অপব্যবহার সম্ভব।
কারণ মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে। রয়েছে কৃষক ও জমিদার, শ্রমিক ও মালিক, নারী ও পুরুষ, গ্রাম ও শহরের বস্তুগত স্বার্থের দ্বন্দ্বজনিত সংঘাত। এসব সংঘাতের ক্ষেত্রে ক্ষমতাশীল পক্ষের ন্যায়সঙ্গত সমালোচনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ভাষাচালাকির আশ্রয় নিয়ে ইসলামোফোবিয়া পরিভাষার অপব্যবহার ঠিক নয়।
প্রতিরোধ ও বিকল্প বয়ান
ইওরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশে দেশে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন ইসলামোফোবিয়া-বিরোধিতাকে বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামের অন্তর্ভুক্ত করেছে। ইসলামোফোবিয়া-বিরোধী আন্দোলন এসব দেশে বাম রাজনীতিক, মানবাধিকার কর্মী ও মুসলমান নাগরিকদের মধ্যে সংলাপসেতু। যেখানে ইসলামোফোবিয়া-বিরোধিতার রাজনীতি বৃহত্তর অর্থে সব রকমের বর্ণবাদ-মুক্ত সমাজ গঠন করার রাজনীতির অংশ (Massoumi, Mills, and Miller 2017)।
Sheehi (2011) ইসলামোফোবিয়াকে একটা “মতাদর্শিক প্রচারাভিযান” হিসেবে দেখেছেন। যার মোকাবেলা করতে হলে কাউন্টার-হেজিমনি জরুরি; অর্থাৎ জ্ঞান ও ভাষার বিকল্প কাঠামো নির্মাণ। ইসলামের গভীর অধ্যয়ন, গণমাধ্যমের ক্রিটিকাল বিশ্লেষণ, এবং মুসলমান তরুণদের সাংস্কৃতিক পুনর্নির্মাণ সবই এই প্রতিরোধের অংশ হতে পারে।
Beydoun (2018) জোর দেন আইনগত ও নীতি পর্যায়ে। তার মতে, ইসলামোফোবিয়া ঠেকানো কেবলই সচেতনতার প্রশ্ন নয়; এটি ইনসাফ ও নাগরিকত্বের প্রশ্ন। মুসলমানদের বিরুদ্ধে চর্চিত এই কাঠামোগত ও পদ্ধতিগত বৈষম্যকে ব্যক্তিগত সংস্কার হিসেবে না দেখে বর্ণবাদের মতই অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।
উপসংহার
ইসলামোফোবিয়া নিছকই কোন ব্যক্তিবিশেষের ধর্মীয় সংস্কার নয়, বরং কাঠামোগত ও পদ্ধতিগত মুসলিম-বিরোধী বর্ণবাদ। যার সূচনা ক্রুসেডে আর বিকাশ উপনিবেশিক যুগে। ৯/১১-পরবর্তী বিশ্ব রাজনীতি যাকে নয়া রূপ দিয়েছে। মূলত রাজনৈতিক স্বার্থেই ইসলামোফোবিয়া জিইয়ে রাখা হয়েছে। আজকে যা স্রেফ পশ্চিমা সমাজে সীমিত নয়। ইসলামোফোবিয়া বিশ্বায়িত, তাই ইসলামোফোবিয়া-বিরোধী লড়াইও বিশ্বায়িতই হবে। আজকের দিনে ইসলামোফোবিয়া-বিরোধী আন্দোলন কেবলই সংকীর্ণ অর্থে মুসলিম প্রশ্ন নয়, সব রকমের বর্ণবাদ-মুক্ত ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রশ্ন।
তথ্যসূত্র
Allen, Chris. 2010. Islamophobia. Ashgate.
Awan, Imran, and Zempi, Irene. 2019. The Routledge International Handbook of Islamophobia. Routledge.
Aziz, Sahar F. 2022. The Racial Muslim: When Racism Quashes Religious Freedom. University of California Press.
Bayraklı, Enes, and Hafez, Farid (eds). 2020. Islamophobia in Muslim Majority Societies. Routledge.
Beydoun, Khaled A. 2018. American Islamophobia: Understanding the Roots and Rise of Fear. University of California Press.
Fekete, Liz. 2009. A Suitable Enemy: Racism, Migration, and Islamophobia in Europe. Pluto Press.
Green, Todd H. 2019. The Fear of Islam: An Introduction to Islamophobia in the West. 2nd ed. Fortress Press.
Hajjat, Abdellali, and Mohammed, Marwan. 2021. Islamophobia in France: The Construction of the “Muslim Problem”. Temple University Press.
Kumar, Deepa. 2012. Islamophobia and the Politics of Empire. Haymarket Books.
Massoumi, Narzanin, Mills, Tom, and Miller, David (eds). 2017. What Is Islamophobia?: Racism, Social Movements and the State. Pluto Press.
Nguyen, Nicole. 2019. Suspect Communities: Anti-Muslim Racism and Surveillance. New York University Press.
Razack, Sherene H. 2022. Nothing Has to Make Sense: A Handbook for the Post-Truth Era. University of Toronto Press.
Runnymede Trust. 1997. Islamophobia: A Challenge for Us All. Runnymede Trust.
Said, Edward W. 1978. Orientalism. Vintage Books.
Sheehi, Stephen. 2011. Islamophobia: The Ideological Campaign Against Muslims. Clarity Press.
Taras, Raymond. 2012. Xenophobia and Islamophobia in Europe. Edinburgh University Press.


