শাহ থেকে লোকতন্ত্র: নেপালের একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (১৭৬৮-২০২৫)
Article
Map: Perry-Castañeda Library Map Collection, The University of Texas at Austin.
ভূমিকা
নেপালের আধুনিক ইতিহাসের গল্পটা সরল একরৈখিক নয়। একদিকে এটা রাজতন্ত্রের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার দাস্তান। অন্যদিকে গণতন্ত্রের ধাপে ধাপে শক্তি অর্জনের আখ্যান।
১৭৬৮ সালে পৃথ্বী নারায়ণ শাহের নেতৃত্বে গোর্খা রাজ্যের মাধ্যমে নেপালের একীকরণ ঘটে। ২০০৮ সালে এসে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করা হয়। তারপর থেকে দেশটিতে চলছে লোকতন্ত্রের সংহতিকরণের যুগ।
এই নিবন্ধে সেই ইতিহাসই সংক্ষেপে বলা হবে।
পৃথ্বী নারায়ণ শাহ ও একীকৃত নেপালের সূচনা (১৭৬৮–১৮৪৬)
নেপালের একীকরণ ঘটে পৃথ্বী নারায়ণ শাহের নেতৃত্বে, যিনি গোর্খা রাজ্যকে কেন্দ্র করে হিমালয়ের ছোট ছোট রাজ্যগুলোকে নেপাল হিসেবে এক করেন (Whelpton 2005)।
১৭৪২ সালে গোর্খা রাজ্যের মসনদে বসেন শাহ। ১৭৬৮ সালে কাঠমান্ডু, পাটান, ও ভারগাঁও জয় করে সংযুক্ত নেপালের ভিত্তি স্থাপন করেন। ১৭৬৯ সালে কাঠমান্ডু শাহের রাজধানীতে পরিণত হয় (রাফিন ২০২২)।
শাহের নজরে নেপাল ছিল “দুই বৃহৎ রাষ্ট্র — চীন ও ভারতের মধ্যে একটা বালিশ।” অর্থাৎ, অত্র অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার প্রতীক। প্রশাসনিক কাঠামো ছিল রাজতান্ত্রিক এবং ধর্মীয় আদর্শভিত্তিক।
শাহ নেপালকে একটি “ধর্মরাজ্য” হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন (Baral 2023)।
১৮১৪-১৬ সালে সংঘটিত হয় ইঙ্গ-নেপাল যুদ্ধ। এই যুদ্ধ শেষ হয় সুগাউলি চুক্তির ভেতর দিয়ে। যা বর্তমান নেপাল রাষ্ট্রটির সীমানাটা নির্ধারণ করেছে (রাফিন ২০২২)।
১৮৪৬ সালে সংঘটিত হয় কোট হত্যাযজ্ঞ। এই হত্যাযজ্ঞকে কৌশলে ব্যবহার করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হলেন জং বাহাদুর রানা। ১০৩ বছরের জন্য কায়েম করলেন রানা রাজত্ব (Bhattacharjee and Meena 2025)।
সারা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল নেপাল।
রানা রাজত্ব: আধুনিকতার মুখোশ, স্বৈরতন্ত্রের মুখ (১৮৪৬–১৯৫১)
রানারা নেপালের রাজার ক্ষমতাকে প্রতীকী করে তোলেন। তাঁরা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রধানমন্ত্রী পদটি ধরে রাখেন। রাজাকে সামনে রেখে আড়াল থেকে দেশ চালান।
এটা ঠিক যে জং বাহাদুর রানা কিছু প্রশাসনিক সংস্কার ও আইন প্রণয়ন করেছিলেন। তবে তাঁর শাসন ছিল স্বৈরাচারী ও বংশানুক্রমিক (Gregson 2002)। তাই রানাদের “আধুনিকতা” আসলে অনেকটাই দেখনদারি ছিল।
রানাদের বিদেশ নীতি ছিল ব্রিটিশ ভারত নির্ভরতা।
ব্রিটিশ ভারতের সেনাবাহিনীতে গোর্খা সেনা সরবরাহ করে নেপাল রাজস্ব ও মর্যাদা লাভ করত (Riaz and Basu 2006)।
১৯২৩ সালে গ্রেট ব্রিটেন এক মৈত্রী চুক্তির অধীনে নেপালকে একটি স্বাধীন রাজ্য বলে স্বীকৃতি দেয়, যার ফলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সাথে দেশটির একটা “বিশেষ সম্পর্ক” রয়ে যায়।
১৯৫০ সালে গঠিত হয় নেপালি কংগ্রেস (এনসি)। ভারতভিত্তিক রানা-বিরোধী শক্তিগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকা এই দল অন্য রানা-বিরোধী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে। শুরু হয় গৃহযুদ্ধ (রাফিন ২০২২)।
১৯৫১ সালে এসে রানা রাজত্বের অবসান ঘটে।
সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ও পঞ্চায়েত যুগ (১৯৫১–৯০)
১৯৫১ সালেই নেপালে সরকার গঠন করে এনসি। প্রধানমন্ত্রী হন মোহন শমসের। কিন্তু পরের বছরই তাঁকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। রাজা ত্রিভুবনকে ফের মসনদে বসানো হয়। আমলাতন্ত্র আর সেনাবাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পান তিনি। দেশটির জন্য প্রণীত হয় একটি অন্তর্বর্তী সংবিধান। ১৯৫৫ সালে ত্রিভুবনের মৃত্যুতে নতুন রাজা হন মহেন্দ্র (রাফিন ২০২২)।
১৯৫৯ সালে বহুদলীয় ব্যবস্থার সংবিধান প্রণীত হয়। পরের বছর দেশটিতে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে জেতে এনসি।
সংবিধান ও সংসদ স্থগিত করে দলীয় রাজনীতির বিপরীতে “পঞ্চায়েত ব্যবস্থা” চালু করলেন মহেন্দ্র। ১৯৬২ সালে একটি নতুন সংবিধান এই ব্যবস্থাকে বৈধতা দিল। যেখানে “পঞ্চায়েতের” আড়ালে প্রকৃতপক্ষে রাজাই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী (Brown 2002)।
পঞ্চায়েত ব্যবস্থা একদিকে দেশটিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। অন্যদিকে নেপালের জনগণের রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে সীমিত করে। এ সময় নেপালি সমাজে জাতিগত বৈষম্য, আঞ্চলিক বঞ্চনা ও দারিদ্র্য প্রকট হয়ে ওঠে; বিশেষত, পাহাড়ি ও মধেশিদের অসন্তোষ বৃদ্ধি পায় (Toffin 2013)।
১৯৭২ সালে মহেন্দ্রের মৃত্যুতে নতুন রাজা হলেন বীরেন্দ্র।
১৯৮০ সালে রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে তীব্র আন্দোলন দেখা দিলে আপোস করেন বীরেন্দ্র। সরাসরি ভোটে সংসদীয় নির্বাচন দিতে রাজি হন। তবে এক শর্তে। সংসদীয় নির্বাচন পার্টি পরিচয় ছাড়া করতে হবে। অনেকের কাছেই এহেন আপোস যথেষ্ট ছিল না। ১৯৮৫ সালে বহুদলীয় ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে নাগরিক অবাধ্যতা আন্দোলন শুরু করে এনসি। ১৯৮৯ সালে বাণিজ্য ও ট্রানজিট নিয়ে ভারতের সাথে নেপালের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
পরের বছরই দেশটিতে নাটকীয় পরিবর্তন শুরু হবে।
জন আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও মাওবাদীদের উত্থান (১৯৯০–২০০১)
১৯৯০ সালে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণআন্দোলন হয়। যা নেপালি ইতিহাসে জন আন্দোলন নামে পরিচিত। এই আন্দোলন নেপালের রাজা বীরেন্দ্রকে দেশটিতে সংবিধানিক রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য করে (Joshi and Rose 2021)।
১৯৯১ সালে নির্বাচনে জিতল এনসি। প্রধানমন্ত্রী হলেন গিরিজা প্রসাদ কৈরালা। ১৯৯৪ সালে কৈরালা সরকার অনাস্থা ভোটে হেরে যায়। নতুন নির্বাচনে একটি কমিউনিস্ট সরকার গঠিত হয়। শিগগিরই এই সরকারকে বিলুপ্ত করা হয়। মাওবাদী বিদ্রোহের সূচনা (Hutt 2004)। বিদ্রোহীরা দাবি তুললেন, রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করতে হবে (রাফিন ২০২২)।
১৯৯৬ সালে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে মাওবাদীরা “জনযুদ্ধে” নামেন।
রাজপ্রাসাদে হত্যাকাণ্ড: রাজতন্ত্রের সংকটের বছরগুলো (২০০১–০৬)
২০০১ সালে নেপালে ঘটে রাজপ্রাসাদ হত্যাকাণ্ড। যুবরাজ দীপেন্দ্র রাজা বীরেন্দ্র ও রানী ঐশ্বরিয়াসহ রাজপরিবারের একাধিক সদস্যকে হত্যা করে আত্মহত্যা করলেন (রাফিন ২০২২)। এই ঘটনা সমগ্র জাতিকে স্তম্ভিত করে তোলে (Misra 2001)। দেশটির নতুন রাজা হলেন রাজার ভাই জ্ঞানেন্দ্র। তিনি ক্ষমতায় এসেই গণতন্ত্র স্থগিত করে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র পুনর্বহাল করার ফিকির করতে থাকেন (Mocko 2015)। জরুরি অবস্থা জারি। নেপালি সেনাবাহিনীকে মাওবাদী দমনের নির্দেশ দিলেন জ্ঞানেন্দ্র।
এই সময় (১৯৯৬–২০০৬) মাওবাদী “জনযুদ্ধ” বিস্তার লাভ করে। মাওবাদীরা দেশটির কৃষক ও গ্রামের গরিবদের মধ্যে বৈপ্লবিক সামাজিক পরিবর্তনের চিন্তাধারা ছড়িয়ে দেয় এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে নামে (Adhikari 2014; Zharkevich 2019)। এই গৃহযুদ্ধে প্রায় ১৭,০০০ মানুষ প্রাণ হারান (Hutt 2004)।
রাজা জ্ঞানেন্দ্র ২০০৫ সালে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। প্রত্যক্ষ শাসন বহাল করেন। নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রের হাত থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে মূলধারার বিরোধী দলগুলোর সাথে একই পাটাতনে আন্দোলন করতে রাজি হলেন মাওবাদীরা।
রাজতন্ত্রের অবসান, লোকতন্ত্রের উত্থান (২০০৬–১৫)
২০০৬ সালে সংঘটিত হল দ্বিতীয় জন আন্দোলন। ৭টি মূলধারার বিরোধী দল ও মাওবাদীদের অংশগ্রহণে। সংসদ ও গণতান্ত্রিক সরকার পুনর্বহাল করা হল। সরকার ও মাওবাদীদের মধ্যে শান্তিচুক্তি সাক্ষরিত হওয়ার মধ্য দিয়ে দশকব্যাপী গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটল। রাজার কাছ থেকে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে পাওয়া মর্যাদা কেড়ে নিল সরকার। “বারো দফা সমঝোতা” রাজতন্ত্রের ক্ষমতা সীমিত করল (Adhikari 2015)। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের লক্ষ্য অর্জিত হল (রাফিন ২০২২)।
২০০৭ সালে অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দিলেন মাওবাদীরা।
২০০৮ সালের ২৮ মে নেপালের আড়াইশো বছরের রাজতন্ত্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করা হয়। নেপালকে একটি ফেডারেল লোকতন্ত্র ঘোষণা করা হয় (Bhandari 2012)। জোট সরকার গঠন করেন পুষ্পকমল দাহাল প্রচণ্ড।
২০১৪ সাল পর্যন্ত চলল সংবিধান নিয়ে বাহাছ।
২০১৫ সালের সংবিধানে নেপালকে একটি সেক্যুলার, অন্তর্ভুক্তিমূলক, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় (Rao 2024)।
এর আগ পর্যন্ত নেপাল ছিল দুনিয়ার একমাত্র সাংবিধানিকভাবে হিন্দু রাষ্ট্র (ভারত সাংবিধানিকভাবে হিন্দু রাষ্ট্র না, সেক্যুলার রাষ্ট্র)।
দেশটির প্রতিক্রিয়াশীলরা এই প্রগতিশীল পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামলে সহিংসতায় ৪০ জনের মৃত্যু হয় (রাফিন ২০২২)।
সমসাময়িক নেপাল: লোকতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ (২০১৫–২৫)
রাজনৈতিক অস্থিরতা লোকতন্ত্রের যুগেও একটা বড় সমস্যা।
নয়া সংবিধান প্রণয়নের পর থেকে সরকার বারবার পরিবর্তিত হয়েছে, দলীয় বিভাজন গভীরতর হয়েছে (Jha 2013)। এই সংবিধান একদিকে একটি ফেডারেল কাঠামো তৈরি করে দেশটিতে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে সরকারি দুর্নীতি, সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ ও জাতিগত রাজনীতি নেপালে একটি অর্থবহ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে (Baral 2023)।
চীন ও ভারতের মধ্যবর্তী “বালিশ” হওয়াটা নেপালকে আঞ্চলিক কূটনীতিতে অনন্য সুবিধা দিয়েছে ঠিকই; কিন্তু একইসাথে অনন্য ভূরাজনৈতিক চাপও সৃষ্টি করেছে।
উপসংহার
শাহ থেকে লোকতন্ত্র। ১৭৬৮ থেকে ২০২৫। নেপালের আড়াইশো বছরের ইতিহাস এক দীর্ঘ সফর। রাজতন্ত্র দেশটিতে প্রথম রাষ্ট্রীয় ঐক্য গড়ে তোলে। গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন নাগরিক অধিকারের পরিসর বাড়ায়। মাওবাদী আন্দোলন কৃষক ও গ্রামের গরিবদের ক্ষমতায় নিজেদের হিস্যা বুঝে পেতে সহায়তা করে। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের জেন জি বিদ্রোহ দেখায়; লোকতন্ত্র স্বর্গ নয়, সরকারি দুর্নীতির মত কিছু সমস্যা রয়ে গেছে।
তথ্যসূত্র
রাফিন, ইরফানুর রহমান। ২০২২। “নেপাল।” অক্টোবর ১৮, ২০২৫ তারিখে অ্যাকসেস করা হয়েছে। https://shomoyrekha.com/nepal/
Adhikari, Aditya. 2014. The Bullet and the Ballot Box: The Story of Nepal’s Maoist Revolution. Verso.
Adhikari, Indra. 2015. Military and Democracy in Nepal. Routledge.
Baral, Lok Raj. 2023. Nepal: From Monarchy to Republic. Routledge.
Bhandari, Surendra. 2012. The King Versus the People: The Abolition of Monarchy and Constitution Making in Nepal. Adroit Publishers.
Bhattacharjee, Dhrubajyoti, and Rakesh Kumar Meena. 2025. The Rise and Fall of the Shahs of Nepal. New Academic Publishers.
Brown, T. Louise. 2002. The Challenge to Democracy in Nepal. Routledge.
Gregson, Jonathan. 2002. Blood Against the Snows: The Tragic Story of Nepal’s Royal Dynasty. Fourth Estate.
Hutt, Michael, ed. 2004. Himalayan People’s War: Nepal’s Maoist Rebellion. Indiana University Press.
Jha, Prashant. 2013. Battles of the New Republic: A Contemporary History of Nepal. Penguin Books.
Joshi, Bhuwan L., and Rose, Leo E. 2021. Democratic Innovations in Nepal: A Case Study of Political Acculturation. University of California Press.
Misra, Neelesh. 2001. End of the Line: The Story of the Killing of the Royals in Nepal. Penguin Books India.
Mocko, Anne T. 2015. Demoting Vishnu: Ritual, Politics, and the Unraveling of Nepal’s Hindu Monarchy. Oxford University Press.
Rao, T. C. 2024. Nepal Rising: Journey from Monarchy to Democracy. Himalayan Books.
Riaz, Ali, and Subho Basu. 2006. Paradise Lost?: State Failure in Nepal. Lexington Books.
Singh, R. S. N. 2009. The Unmaking of Nepal. Lancer Publishers.
Toffin, Gérard. 2013. From Monarchy to Republic: Essays in Changing Nepal. Social Science Baha.
Whelpton, John. 2005. A History of Nepal. Cambridge University Press.
Zharkevich, Ina. 2019. Maoist People’s War and the Revolution of Everyday Life in Nepal. Bloomsbury Academic.


